Friday, July 8, 2016

ভূপতিত


ভূপতিত





পড়ে থাকো লাল গোলাপ,
পড়ে থাকো ফেলে আসা পথের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে।
ভোরের ধোঁয়াশায় যে পথে
সবুজের কলাহল তখনও থমকে যায়নি;
যে মাটিতে খালিপায়ে নির্ভয়ে চলা যেত,
সে মাটির শেষ সন্তানের মত পড়ে থাকো।
যে সূর্য গ্রহণের আকর্ষণে নিভে যায়নি,
সেই রশ্মির কোমল আশীর্বাদের মত পড়ে থাকো।

পড়ে থাকো লাল গোলাপ,
পড়ে থাকো বাক্সবন্দি হাজার স্বপ্ন হয়ে।
দুরন্ত অনাগ্রহে যার জন্ম হয়নি,

সেই প্রেমের নিবেদনরুপে পড়ে থাকো এইখানে।

Saturday, May 28, 2016

কালবেলা

কালবেলা




আমি জানি,
একদিন তোমার চাউনিও পারবেনা
এই যুদ্ধ থামাতে।
আর তুমিও হয়ে পরবে 
বাকি তেত্রিশ কোটি অসাড় ক্ষমতাময়ের মত
ফ্রেমবন্দী, একাকী।

আমি জানি,

একদিন তোমার সুরকে হার মানাবে 
সাইরেনের শব্দ।
আর তোমাকে চলে যেতে হবে,
জেলের হাজার সাধারন কয়েদীর মত
সশ্রম কারাদণ্ডে।

আমি জানি,

একদিন তুমি হাজার চেষ্টা করেও পারবেনা
সূচনা করতে।
আর তোমার হাতেই
প্রতি মহাকাব্যের কবির মত লেখা হবে
নির্মম উপসংহার।

Thursday, May 12, 2016

কুরুক্ষেত্র


কুরুক্ষেত্র





চোখ বন্ধ করে দরজাটুকু পেড়োতেই,
কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেলাম।
মধ্যরাত্রির মত চুপ হয়ে আছে সারি সারি মানুষ।
মনুষ্যত্বের শেষ সূর্যাস্ত দেখে যারা কেঁদেছিল অথবা
চালিয়েছে বন্দুক;
তাঁদের নিঃশ্বাসে ভারি হয়ে আছে সহস্রাব্দের পুরনো বাতাস।
তাঁদের হাড়ে শিলায়িত প্রেম জমা পড়ে আছে,
সেই প্রথম মানবতার জীবাশ্ম দেখে চমকে উঠলাম।
খসে পড়া মুখের কোটরে কি কথা ছিল?
বোঝা গেলনা কিছুই।
শুধু বোঝা গেল,
ছ’শ কোটি আত্মার সমুদ্রের ধারে-
বালিকে যতই বলি তাজমহল বানাতে,

মরুভূমির উদ্দেশ্য শুধু ইতিহাসকে ঢেকে রাখা।

Tuesday, May 3, 2016

হালখাতা


হালখাতা





চিত্রগুপ্তের টেবিলে অনেকক্ষণ
বসে থাকলে কেরানী মনে হয় নিজেকে।
যেন জন্ম আর মৃত্যুর সহস্র অর্বুদ বছর প্রাচীন কোন ফাইল,
তাঁর হলুদ মুড়মুড়ে পাতার ফাঁক দিয়ে আমায় খেয়ে ফেলতে চায়।
চিত্রগুপ্তের টেবিলে অনেক
গল্প পড়ে থাকে মাঝে মাঝে,
তাঁদের শবস্বপ্ন যোগ-বিয়োগের বিচারের অপেক্ষা করে।
হাসি পায়, তারা এখনও কতকিছু খুঁজে যায় দেখে।
গতজন্মের গোপনতম প্রেম, ভ্রান্তি, বিলাস।
ঐ টেবিলেই লেখা থাকে শেষ সর্বনাশ
তারপর কি?
চিত্রগুপ্তের টেবিলে,

অচেতন হয়ে পড়ার আগে আমি একগুচ্ছ কবিতা লিখে ফেললাম।

Thursday, February 18, 2016

কালযাত্রী



কালযাত্রী




ওজন বেড়ে গেছে বলে,
মেরুদণ্ড ফেলে দিলে হল আমাদের।
সময়ের অভাবে নিঃশ্বাসও নিয়ে আসা হয়নি।
শুধু ব্যক্তিত্ব থেকে গেল।
বুদ্ধির রেওয়াজ করে জিন থেকে জিনে অবাধ  স্থানান্তর হল।
অব্যক্ত হৃদয় আর অ্যাপেন্ডিক্স শেষ।

এরপর আর কোন কবিতার দরকার নেই, এরপরের কবিরা-
“প্রতিবন্ধি”।
কারন এদের হৃদযন্ত্র জামার ভেতর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে।
অশোভন দেখায়।
এদের কৃপা করে দিয়ে আসা হোক বহুকাল দূরের
কোন সময়ে;
ওই কালদ্বীপে এরা বালি খুঁড়ে খুঁজে নিক ভালবাসা।

Tuesday, February 9, 2016

স্বপ্নালু




স্বপ্নালু




এবার কিছু স্বপ্ন আসতে পারে,
বিছানা তৈরি, অন্ধকার ঘনীভূত। রাতের আকাশ
চুরি করে যারা আলো জ্বেলেছিল তারা নিভে গেছে।
লক্ষ্মীপেঁচা ডাক দিয়ে গেছে দুবার।
এখন যদি পরাবাস্তব কাছে এসে যায়, ছুঁয়ে ফেলব।
তাই ভাবছি স্বপ্ন আসুক।
 
যারা বলেছিল ঘুম পারাবে, তাঁদের ভোলাতে স্বপ্ন আসুক।
যারা বলেছিল স্বপ্ন দেখতে, তাঁদের ভোলাতে স্বপ্ন আসুক।
কিছু রঙ থাক, বাকিটা নিকষ;
কেউ চলে যাক, বাকিরা স্তব্ধ....
আমার চোখের দাগ মেটাতে স্বপ্ন আসুক।
আমার রক্ত-ক্ষরণ বাড়িয়ে স্বপ্ন আসুক।

Sunday, February 7, 2016

আত্মবন্দি


আত্মবন্দি





দিন থেকে রাত হয়,
রাত থেকে ভোর। একটু একটু করে
ছোট হয় খাঁচা।
কালকের খেলার মাঠে আজ ওঠে পাঁচিল।
কাঁটাতার, প্রহরী… গেরুয়া দেওয়াল।
বুকের ভেতরের গভীর নিঃশ্বাসটুকুও
ফিরিয়ে দিতে হবে আদমশুমারির স্বার্থে।
প্রতি রাতের শেষে একটু একটু করে ছোট হয় খাঁচা।
একটু একটু করে,

সেতুরা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে।

Monday, February 1, 2016

ভ্রূণাস্ম





ভ্রূণাস্ম


এই কবিতার দাম নেই।
এই কবিতায় শিল্প খুব কম, বড় একঘেয়ে।
আমার আগে আরও হাজার মানুষ, আরও হাজার পৃষ্ঠায়
এই একি শব্দ ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে, ভেঙে-চুরে লিখে গেছে বা গেছেন।
তাই এই কবিতাটি ছাপানো যাবেনা অতি-দামি মলাটের ভেতরে।

আমার কি করনীয় ছিল?
আমি কিভাবে শিল্পী হই?
মিথ্যে বলবো? অতিনাটকীয় হব? কী করে লিখবো
অনাস্বাদিত, অভূতপূর্ব একটি লেখা?
তাঁরচেয়ে ডায়েরীটাই সামলে নিক-
আমার কলমের খোঁচাগুলি।
আমি সাহিত্যের শিশু; তাই আমার শব্দ-শিশুদের

জন্মের আগেই গর্ভপাত হোক।

Saturday, January 23, 2016

রূপান্তরিত



রূপান্তরিত




রাত পাখীর ডাক বলে “খাদ্য চাই”।
হাড়ভাঙা ছাত্রদের “শব্দ হোক”।
শেষ হিসেব, ভাগশেষ মিলছে না।
তাই মিছিল।

পিতামহও বলেছিলেন চাঁদ রুটি।
হারিয়ে যায় কোন পাতায় মৃত্যুদিন?
কোন পূর্ণিমার ভাগ নিল গ্রহন-কাল,
চর্চা হোক।

চর্চা হোক, তারপরে হোক বিকেল।
ভাঙতে থাক পাথর, আবহবিকার।
সহজপাচ্য স্বপ্নদের পুনর্বাসন।

বনভোজন।

জাগ্রত



জাগ্রত





আমি ঘুমাইনি,
জেগে আছি স।রা রাত…
রাতের শাসনে চূড়ান্ত আঘাত
হেনেছি। আর দেখছি আরও কতক্ষন জেগে থাকা যায়।

আমি ঘুমাইনি
দুপুরে বাসে হাত তুলে জড়াজড়ি করে,
অচেনা এক পুরুষের সাথে;
যতটুকু জেগে ছিলাম।
তারচেয়েও বেশী জেগে আছি এত রাতে।
কারনে নয়-
বিড়ম্বনার বিলম্বিত অকারণে আমি ঘুমাতে পারছিনা।

Thursday, January 21, 2016

শেষোক্ত


শেষোক্ত


ভেঙে গেছে বাঁশি,
তাঁর ছিঁড়ে গেছে সেতারের।
গান শোনা ভুলে,
নিত্যনৈমিত্তিক চিৎকার হাড়ে গুঁজে রাখি।

কার কথা শুনি?
সবাই একসাথে বলতে চায়। কারও কান নেই-
শুধু মুখ।
কার পাশে দাঁড়াই?
সবাই একহাত জায়গা চায়;
তা পেয়ে গেলে আরও একহাত। 
মহাবিশ্বের প্রসারণও তাই
এত তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠা চাহিদা
মেটাতে পারেনি।

তাই শেষমেশ,
কৃষ্ণগহ্বরে ডুবে যাওয়া ভালো।
নিজের আলোই 
আসবে ফিরে চোখে বারবার।
নিজের প্রাচীন মুখ দেখে যাব অনন্ত ভবিষ্যৎ ধরে।
আর সান্তনা দেব এই ভেবে,
"চিরকালই আমি খারাপ ছিলাম না।"

মুমূর্ষু




মুমূর্ষু

যা কিছু শেষ হওয়ার কথা-
           শেষ হলেই ভালো।
নাকে নল, হাতে স্যালাইন কিংবা
রাস্তায় ব্যারিকেড করে-
কয়েকটা নিঃশ্বাস, প্রাচীন বছর কোনোকিছুই
আটকে রাখা যায়না। 

তবে আরও ভালো হত-
যদি একটু একটু করে শেষ না হয়ে
দশমির সন্ধ্যার ফাঁকা চালার নিছের প্রদীপের মত
অন্তত একবার- 
দপ করে জ্বলে উঠত।
অন্তত একবার সোজা হয়ে দাঁড়াত।
একবার ব্যারিকেড ভেঙে প্রকাশ্য রাস্তায়
আমার হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে নিত।